প্রিয় পাঠক,
আসসালামু আলাইকুম। আমরা খুব ছোট বেলায় যে গ্রামীণ মাইক্রোফোন শুনতাম অর্থাৎ যেটাকে সংক্ষেপে মাইক বলা হত আজকাল আর সেই মাইকের প্রচলন প্রায় নাই। যেটা আছে তা বিভিন্ন সভা-সমিতি, বক্তৃতা টাইপের অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তো যুগে যুগে এই মাইকের অনেক পরিবর্তন হয়েছে এমনকি সেই সময়ে অর্থাৎ আমাদের ছোটবেলায় যে মাইক প্রচলিত ছিল সেটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
যাইহোক, আমরা দেখেছি তখন বিয়ে অথবা এ ধরনের কোনো সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ওই মাইক ভাড়া করে আনা হতো এবং মাইকের সাথে কোম্পানি একজন অপারেটর দিয়ে দিত। এই মাইক অপারেটর কর্তৃক দেখাশুনা এবং পরিচালনা করা হতো।

কিন্তু মাইকটার সেটআপ ছিল একটু অন্যরকম।
বড় একটা উঁচু বাঁশের মাথায় মাইকে বেঁধে দেয়া হতো এবং মাইকের যে এমপ্লিফায়ার সেটার সাথে ক্যাবলের সংযোগ থাকতো নিচের অপারেটিং মেশিনের সাথে। এবং গান মিউজিক বাজানো হতো রেকর্ডার থেকে, বর্তমানের সিডি বা কম্প্যাক্ট ডিস্ক এর মত।
এই ডিস্ক একটি মেশিনের সাহায্যে চালানো হতো। সেই গানটাই এমপ্লিফাই হয়ে ওপাশে বাঁশের মাথায় বাধা মাইক দিয়ে গ্রামবাসী শুনতে পেত।
যে বাড়িতে অনুষ্ঠান হতো শুধু সেই বাড়ি নয় সেই পাড়া বা গ্রাম এবং পাশের গ্রাম থেকেও এই মাইকের গান শোনা যেত। মাইকের শব্দ দূর থেকে বা পাশের গ্রাম থেকে, পাশের পাড়া থেকে শোনা না গেলে ওই মাইকের অপারেটরের উপর নানারকম চাপ দেওয়া হত। এ সবই ছিল গ্রামীন সহজ সরল জীবনের অংশ বিশেষ।
নানা রকম শ্রোতা থাকত কেউ শুনতে চাই তো পল্লীগীতি, কেউ ভাটিয়ালি, কেউ গ্রামীন গীত ইত্যাদি।
একটি মজার বিষয় হচ্ছে তখনকার মাইক একজন অপারেটর দ্বারা পরিচালিত হতো এবং অপারেটরকে সার্বক্ষণিক সেখানে থাকতে হতো।
বর্তমান যে মাইক হয়েছে এর পিছনে কারো থাকতে হয় না, কেউ চাইলে সকালবেলা মাইক অন করে রাখবে এবং যদি তার পেনড্রাইভে কয়েকশ গান সেভ করা থাকে তাহলে এই গানগুলির সারাদিন বাজতে থাকবে কোনো অপারেটর ছাড়াই।
যা হোক, তখনকার সময়ে গ্রামে যে মাইক বাজানো হতো বিয়ে বা খাৎনার অনুষ্ঠানে সেখানে সারাদিন একটার পর একটা রেকর্ড বাজতে থাকলেও দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন শিল্পীর অর্থাৎ ওই বাড়ির, ওই পাড়ার বা গ্রামের ছেলে, মেয়ে, বয়স্কদের বিভিন্ন রকম গান গাওয়ার জন্য বরাদ্দ থাকত।
তখন বড় বড় মাইক্রোফোন ছিল যেটিকে বলা হত মাউথ। এখনকার মতো চিপস লাগানো মাইক্রো সাইজে প্রায় অদৃশ্য মাইক্রোফোন নয়। তখনকার মাইক্রোফোন গুলো আবার তার দিয়ে অপারেটিং মেশিনর সাথ লাগানো থাকতো।
সাধারণত ওই মাইক্রোফোনের মাতবর থাকত ওই বাড়ির বড় ছেলে তার এবং তার বন্ধুবান্ধরা। আমার মনে আছে,আমরা তখন খুবই ছোট। ওই মাইকে গান গাইতে পারা খুবই একটা সৌভাগ্যের বিষয় ছিল ছোটদের জন্য।
আমরা যেহেতু ছোট আমরা ওই মাইক্রোফোন হাতে নেওয়ার সুযোগ পেতাম না। আমরা অনেকেই বড়রা যে গান গাইছে মাইক্রোফোন ব্যবহার করে তার আশেপাশে জটলা করে বসে থাকতাম। ঠেলাঠেলি পর্যন্ত হত। এর ফাকে কখনো কখনো সুযোগ পেলে ওই মাইক্রোফোনটা একটুখানি ছুয়ে দেওয়া যেন ছিল সোনার হরিন। তো আমরা আশপাশ হতে ওই মাক্রোফোনে একটু ফু দিয়েও খুশি হয়ে যেতাম।
এখন আপনি আপনার হাতের এন্ড্রয়েড ফোন টা কে ব্যবহার করে আপনার ভয়েস পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় ছড়িয়ে দিতে পারেন অথবা নিজের শোনার জন্য নিজের স্মৃতি হিসেবে আপনার মোবাইলের মেমোরিতে সেভ করে রাখতে পারেন।
তো এখন আর সেই ফু দিয়ে মজা পাওয়ার দিন নেই। এখন সেই ছোটরা, আমরা এখন বুড়া হয়ে যাচ্ছি আর যারা এখনকার ছোট তারাও ওই ফু দিয়ে মজা পায় না। সবার হাতে আছে এন্ড্রয়েড এবং শত অ্যাপস। ছোট্ট শিশুটি যে এখনও কথা বলতে পারে না সেও অ্যান্ড্রয়েড ফোন চালাতে পারে অ্যাপ ব্যবহার করে ড্রইং করতে পারে এমন নজির আছে ভুরি ভুরি। আজকে আমার আসলে একথা অবতারণা এই কারণে যে বড় পরিবর্তন যে আমরা একটা মাইক্রোফোন এ ফু দিয়ে আনন্দ পেতাম সেই আমরা আজ আরো ডিজিটালাইজড।
আমরা হাজারো মিউজিক এবং ভিডিও নিয়ে খুশি থাকতে পারিনা আবার অন্যদিকে আগে যে মাইক এবং অপারেটর ভাড়া করে আনতে হতো হতো। সেই অপারেটরে যোগাযোগ নেই আজ আপনি চাইলে মাইকে আপনার ছোট্ট মাইক্রো এসডি কার্ডের সিপস এ বা এন্ড্রয়েড ফোন টা লাগিয়ে দিয়ে আপনি চাইলে বাসায় গিয়ে ঘুমাতে পারেন আপনার মিউজিক গান বা জিও চলতে থাকবে অবিরাম
তো, সম্মানিত পাঠকগণ, আমি আজ আমার ছোটবেলার একটা ছোট্ট কিন্তু মজাদার স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। চাইলে আপনি আপনার ছোটবেলার অথবা বড় বেলার স্মৃতি, বর্তমানের অথবা ভবিষ্যতের কোনো পরিকল্পনা, হাসি আনন্দ এখানে লিখতে পারেন, শেয়ার করতে পারেন।
আজকে আমার এই লেখা পড়ার জন্য আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।